ইমাম খাইর, সিবিএন:
উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে রবিবার রাতে অপহৃত ৬ রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
তাদের মধ্য থেকে তিনজনকে গলাকাটা অবস্থায় সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে টেকনাফ উপজেলার চাকমারকুল এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড় থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তারা হলেন- উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের ছৈয়দ হোসেনের ছেলে নূর আলম (৪৫), কুতুপালং ক্যাম্পের ডি-ব্লকের আবদুল খালেক (২৫) এবং ই-ব্লকের মোহাম্মদ আনোয়ার (৩৩)।
একই দিন দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং এলাকা থেকে বাকী তিনজনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তারা হলো- বালুখালী ক্যাম্পের নুরুল আমিন, জামাল হোসেন ও মো. সোলাইমান। তাদেরকে উখিয়া থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়েছে বলে জানান থানার ওসি মো. আবুল খায়ের।
টেকনাফের হোয়াইক্যং পুলিশ চৌকির কর্মকর্তা (এসআই) দীপংকর কর্মকার জানান, ছয় রোহিঙ্গা অপহৃত হওয়ার পর তাদের মধ্যে তিনজনকে হত্যাচেষ্টার সময় উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি জানান, পুলিশের একটি দল স্থানীয়দের সহযোগিতায় সকাল ৯টার দিকে পাহাড়ের ভেতর থেকে তিন রোহিঙ্গা যুবককে গলা কাটা অবস্থায় উদ্ধার করে। তাদের পরনে ছিল গেঞ্জি ও লুঙ্গি। তাদের কে বা কারা হত্যার চেষ্টা করছিল, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, রোববার রাতে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে ছয় রোহিঙ্গা অপহৃত হন। সকালে চাকমারকূল রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় অপহৃতদের রাখা হয়েছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশ তিনজনকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করার সময় উদ্ধার করে। অপহরণকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা যায়নি।
ওসি বলেন, সম্ভবত মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ভয় দেখাতে তিন রোহিঙ্গার গলা অল্প করে কাটা হয়েছিল। হত্যার পরিকল্পনা থাকলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতো। নিখোঁজ অপর তিনজন রোহিঙ্গাকে উদ্ধারে পাহাড়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।
উদ্ধার হওয়া তিনজনের মধ্যে একজনকে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ক্লিনিকে আর দুইজনকে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন রেড ক্রিসেন্ট ফিল্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এ হত্যাচেষ্টার পেছনে কারা বা কিসের দ্বন্দ্ব রয়েছে সে সম্পর্কে পুলিশ কিছু বলতে পারেনি। সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার তিনজনকে ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।
কেন অপহরণ?
পুলিশ মনে করছে, মুক্তিপণের জন্য ছয়জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করা হয়েছিল। এর আগেও রোহিঙ্গা ও স্থানীয় লোকজন মিলে মাদক পাচার, অপহরণসহ নানান ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। গত এক বছরে উখিয়া ও টেকনাফ আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের হাতে ১৯ জন রোহিঙ্গা খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত মাসে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালককে কয়েকজন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা মিলে অটোরিকশাসহ পাহাড়ে আটক রেখে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে পুলিশ ওই চালককে উদ্ধার করে।
অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, শ্রমিক হিসেবে কাজ দেওয়ার কথা বলে উখিয়ার বালুখালী শিবিরের ছয় রোহিঙ্গাকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে তুলে নেওয়া হয়। তাঁদের প্রথমে টেকনাফের হোইয়াক্যং এলাকার চাকমারকুল আশ্রয়শিবিরে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাঁদের নেওয়া হয় পাশের পাহাড়ের জঙ্গলে।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন দাবি করেন, রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে। তিনি মনে করেন, এই ঘটনার পেছনেও রোহিঙ্গারাই রয়েছে। এ সময় তিনি গত এক বছরে উখিয়া ও টেকনাফ আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের হাতে ১৯ জন রোহিঙ্গা হত্যার তথ্য তুলে ধরেন।